বুক রিভিউ: মেমসাহেব - নিমাই ভট্টাচার্য

বইয়ের প্রচ্ছদ <3

পাঠ -অনুভূতি : মা-দিদির স্নেহবঞ্চিত হয়ে বেড়ে ওঠা কলকাতার এক ক্ষুদ্র কাগজের অখ্যাত রিপোর্টার যুবক বাচ্চু। আস্থাভাজন অগ্রজ এবং একইসাথে অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া দোলাবৌদিকে লেখা বেশ কিছু চিঠির সম্মিলন কিংবা একটি জীবনালেখ্য মেমসাহেব
নারী সাক্ষরহীন জীবন পেরোনো বাচ্চুর জীবনে নারীসঙ্গের ঝড় এসেছিলো। স্কুল জীবনে তার মনে ধরেছিলো নন্দিনীকে, কলেজ জীবনে নীলিমা। তবু কোথায় যেন ফোঁকর ছিল। হুট করে যেভাবে ঝড় এসেছে,তেমনি হুট করে আবার হৃদয় ছেড়েও গিয়েছে। বাঁধা পড়েনি কেউ।
পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে একদিন রেলভ্রমণের সময় হঠাৎ বাচ্চুর চোখে পড়ে কামরার এক শ্যামবর্ণের ঈশ্বরী চোখের মায়াবিনী তরুণী। কিছু একটা বিশেষ আছে তার মাঝে। বাচ্চুর হৃদয়ে কেমন এক ঝড় বয়ে যায়। হৃদয়ে কেমন আকুলতার ঢেউ খেলে,নারী-ঝড়ের ঢেউ। এর আগেও বাচ্চুর জীবনে নারী-ঝড় এসেছে, থিতু হতে পারেনি। এবারের ঢেউ সত্যিই আলাদা। বাচ্চু অনুভব করতে শুরু করে তার হৃদয়ের যে শূণ্যতা তা এই শ্যামাঙ্গিনীই পুরাতে পারবে।
প্রথম দর্শনে চোখাচোখি ছাড়া তেমন কিছু না হলেও বাচ্চুর তীব্র বিশ্বাস জন্মায়,তাদের আবার দেখা হবে। কীভাবে দেখা হবে সে জানে না। সে জানে, তাদের আবার দেখা হবে। বিশ্বাস,ভাগ্য কিংবা তীব্র আকাঙ্ক্ষার জোরেই হোক,তাদের আবার দেখা হয়, হতে থাকে। তারা দুজনেই অনুভব করে তাদের যত শূণ্যতা তা বুঝি একে-অপরের অভাবেই।
যে সময়টাতে মেমসাহেব বাচ্চুর জীবনে আসে তখন বাচ্চু সামান্য বেতনের এক রিপোর্টার যার জীবন স্বপ্নহীন। নিতান্তই খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই যার একমাত্র সম্বল। মেমসাহেব ঠিক যেন জাদুর কাঁঠির মতো বাচ্চুর জীবনে আবির্ভূত হলেন। সামান্য কাগজের রিপোর্টার বাচ্চু মেমসাহেবের অনুপ্রেরণা,সাহস আর প্রেমের জোড়ে হয়ে ওঠে দেশের অন্যতম সাংবাদিক। সামান্য বেতনে মাস পার করা বাচ্চু তার মেমসাহেবকে সঙ্গী করে একটু একটু করে গড়ে তুলতে থাকে তাদের অনেক অনেক দিন,মাস,বছর,শ্রম আর ভালোবাসার সাম্রাজ্য। একটা টোনাটুনির সংসার,যাবতীয় তৈজস,মেমসাহেবের শখের রকিং চেয়ার, অর্গান, হেয়ার ড্রায়ার, বারান্দা, বাগান, বাগানের প্রিয় ফুল - সবকিছুই ঠিক রাখা হয়। ঠিক হয় আসছে ফাল্গুনে বিয়ে করে মেমসাহেবকে ঘরে তুলবে বাচ্চু,তাদের সাজানো ঘর-সংসারে। মেমসাহেবের মেজদিদি আর মা তাদের প্রণয় গল্প জানবার পর থেকেই তাদের সমাদর,সহায়তা এমনকি জামাই আদর অবধি করতে থাকে।
আসছে ফাল্গুন এসে পড়ে,তাদের বিয়েটা আর হয় না। তাদের একান্তই নিজেদের গড়া প্রেমের সাম্রাজ্যে আর তাদের সংসার হয়ে ওঠে না। মেমসাহেব আর কোনোদিনই ফেরে না বাচ্চুর কাছে।দেখতে চায় না তার রিপোর্টার তাকে ছাড়া কেমন আছে,কী করছে।
কী এমন হয়েছিলো যে, যে'ই মেমসাহেব বাচ্চুকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো তিনি আর কখনো বাচ্চুর কাছে ফেরেনি? মেমসাহেব আসলে কে? রিপোর্টারই বা কেন তাকে মেমসাহেব বলে সম্বোধন করেছে? বাচ্চু এখন কেমন আছে,কী করছে? - এসকল প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে প্রখ্যাত এবং সদ্যোপ্রয়াত গুণী লেখক নিমাই ভট্টাচার্য এর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস মেমসাহেব 

• বইটির ভাষা ধরে রাখা চরণ -

        " যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক
          তারা তো পারে না জানিতে
          তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ
          আমার হৃদয়খানিতে "

•             বই :  'মেমসাহেব'
         লেখকনিমাই ভট্টাচার্য
         প্রকাশ :  ২০১৫ সন (৭৯তম মুদ্রণ)
      প্রকাশক দে'জ পাবলিশিং (ভারত)
 পাতা সংখ্যা২০৭ টি
           ধরণ উপন্যাস
                                     -----

[ উপন্যাসটা বেশ কিছুদিন আগেই পড়ে শেষ করেছি। পর্যালোচনা লেখার ইচ্ছে হচ্ছিলো খুব তবু এই-সেই করে আর লেখা হচ্ছিলো না। বই পড়ে শেষ করে ফেললেও রেশ থেকে গিয়েছিলো। এমনই জাদুময় লেখনী। সেই রেশের জোড়েই আজ লিখে ফেললাম পর্যালোচনাটি। পাঠক পড়ে আরাম পেলেই কেবল লেখাটি স্বার্থক হবে। ধন্যবাদ। ]

#পৃথিবী_বইয়ের_হোক📚
©সামি আল সাকিব

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

বুক রিভিউ: যাপিত জীবন - সেলিনা হোসেন

বুক রিভিউ : ‘বৃষ্টি ও মেঘমালা’—হুমায়ূন আহমেদ

প্রলাপা’য়োজন -০৪ | সামি আল সাকিব