বুক রিভিউ : ‘বৃষ্টি ও মেঘমালা’—হুমায়ূন আহমেদ


• পাঠ -অনুভূতি : হাসান। একটা ছোট্ট কনস্ট্রাকশন ফার্মের কর্তা। তার ব্যক্তিগত সহকারী - লীনা। হাসান,লীনা, অফিস পিয়নসহ অফিসের মোট সদস্য সংখ্যা কমতে কমতে পাঁচজনে এসে ঠেকেছে। খুব খারাপ সময় যাচ্ছে অফিসের। গত তিনমাস যাবৎ বেতন হয়নি কারো। এমন চললে বন্ধ করে দিতে হবে ফার্মটি। 
একটা প্রজেক্ট নিয়ে ঘুরে দাড়ানোর আশায় হন্যে হয়ে যখন দৌড়াদৌড়ি চলছে তখন'ই ঈশ্বরের দূত হয়ে আসেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বৃদ্ধ ইয়াকুব আলী। ব্যক্তিজীবনে তিনি নিঃসঙ্গ। তার একমাত্র মেয়ে স্বামী-কন্যা নিয়ে বিদেশে বসবাস করেন। তার ইচ্ছে নাতনি এলেনে'র আগামী জন্মদিনে সে দেশে এলে তাকে চমকে দেবার মতো একটা বিশেষকিছু উপহার হিসেবে দেবেন। বিশেষকিছুটা - মায়ানগর। মায়ানগর তৈরির দায়িত্ব পান হাসান সাহেব।

ওদিকে লীনার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ফিরোজে’র সাথে। লীনা ভালোবাসে হাসান সাহেবকে, তবে ঠিক কপোত-কপোতির ভালোবাসা নয়। শ্রদ্ধা আর মুগ্ধতার মিশ্রণের যে’ই অনুভূতি, অনেকটাই তেমন।
হাসানের ছোট্ট ছেলে অন্তু। বাবা পাগল এই ছেলেটা অসুস্থ। ওদিকে হাসান ব্যস্ত মায়ানগর তৈরিতে ছেলেকে ভালোবাসলেও কাজে মশগুল হাসানের অবসর হয় না ছেলেকে, পরিবারকে সময় দেবার। ধীরে ধীরে হাসানের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে তার স্ত্রীর। অন্তুর অসুখ বাড়তে থাকে। তার মা তাকে চিকিৎসার জন্য মাদ্রাজ নিয়ে যান। বাবা পাগল ছেলেটা তখনও কেবল বাবার মুগ্ধতায় মত্ত। তার হাতে আঁকা একটা ছবি হাসানের হাতে পৌছায়, স্ত্রীর চিঠি। বেশ নরম ভাষায় পুত্রের চিকিৎসা আর ব্যক্তিগত আলাপ। এর সাথে পুত্রের আঁকা একটি ছবি। বাবাকে এঁকেছে সে। হাসানের হাতে একদমই সময় নেই। জুনের নয় তারিখের মাঝেই শেষ করতে হবে মায়ানগরের কাজ। ওদিকে লীনার বিয়ের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসে। ফিরোজের চিঠি পেয়ে লীনাকে অবসরে পাঠায় হাসান। তার দিনকাটে মায়ানগরের দিকে তাকিয়ে, যেভাবেই হোক শেষ করতে হবে স্বপ্নপুরী তৈরি।

সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসে। ওদিকে অন্তু কেবলই খুঁজতে থাকে বাবাকে -  ‘বাবা কোথায়? where is my dad?’।

জুনের নয় তারিখ। ইয়াকুব সাহেব নাতনিকে নিয়ে মায়ানগরে ঢুকবার জন্য অপেক্ষা করছেন। ওদিকে একটা চিঠি আসে হাসানের হাতে। স্ত্রী নাজমার চিঠি। সম্ভবত একটা ঝড়। দীর্ঘ প্রতিক্ষার ব্যর্থতাভরা অবসান। অন্তিমক্ষণে কাছে না পাবার অভিমান,হাহাকার। হাসানের মনে হতে থাকে সমস্ত জগৎজুড়ে বৃষ্টি নেমেছে। এই বৃষ্টিতে ভিজে দূরের কোনো এক দ্বীপের এক কদমগাছের আড়াল থেকে তাকে ডেকে চলেছে কেউ। সে যেন খুব প্রিয় কাউকে হাঁতড়ে ফিরছে সেখানে..অথচ ছুঁতে গেলেই আর পারছে না...

আচ্ছা, এই যে, ছুঁতে না পারার হাহাকার যখন হৃদয়ে মেঘের গর্জন বানায় তখনি বুঝি পৃথিবীটাও আমাদের মতো করে কেঁদে ওঠে! তার হৃদয়-আকাশ বেয়ে ঝমঝমিয়ে নামে বৃষ্টি, বৃষ্টির সাথে মেঘমালা, বৃষ্টি ও মেঘমালা...


•             বই :  ‘বৃষ্টি ও মেঘমালা’
         লেখক :  হুমায়ূন আহমেদ 
         প্রকাশ :  ২০১৮ সন(১৫তম মুদ্রণ)
      প্রকাশক :  পার্ল পাবলিকেশন্স
 পাতা সংখ্যা :  ১১৮ টি
            ধরণ :  সমকালীন উপন্যাস

                                       ---


©সামি আল সাকিব
#পৃথিবী_বইয়ের_হোক📚

 


 

Comments

Popular posts from this blog

বুক রিভিউ: যাপিত জীবন - সেলিনা হোসেন

বুক রিভিউ: মেমসাহেব - নিমাই ভট্টাচার্য

প্রলাপা’য়োজন -০৪ | সামি আল সাকিব